বিশেষ সংবাদদাতা:

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার ৩৬নং উত্তর লেবুজিলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শাহিনুজ্জামানের বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার অপরাধে এবং তাকে অন্য বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনের জন্য ঘুষ নেওয়া ৯০ হাজার টাকা উপজেলার দুই প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফেরৎ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

ঘুষ নেওয়ার বিষয়টি এ বছরের জুলাই-আগস্টে হলেও সম্প্রতি জানাজানি হয়। শিক্ষা অফিসের ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা শিক্ষা অফিসার অবগত হয়ে নড়েচরে বসে শিক্ষা অফিস। এরপর গত ৫ অক্টোবর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার শাহিনুজ্জামানের চাচাতো বোনের বাসায় গিয়ে ঘুষের টাকা ফেরত দিয়ে আসেন বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শাহিনুজ্জামানের চাচাতো বোন।

ঘুষ নেওয়া অভিযুক্ত দুই শিক্ষা অফিসার হলেন, উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোসা: হেনায়ারা খানম এবং সহকারী শিক্ষা অফিসার মামুনুর রহমান।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৩৬নং উত্তর লেবুজিলবুনিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. শাহিনুজ্জামান দীর্ঘদিন বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার অপরাধে তার সার্ভিস বুকে নোট রাখা এবং বরখাস্তের ভয় দেখিয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোসা: হেনায়ারা খানম নগদ ৩০ হাজার টাকা এবং উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মামুনুর রহমান ব্যাংক চেকের মাধ্যমে ৬০ হাজার টাকা ঘুষ নেন। ঘুষের বৈধতার জন্য তারা শিক্ষক শাহিনুজ্জামানের কাছ থেকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর একটি আবেদন লিখিয়ে রাখেন। সেখানে শাহিনুজ্জামান লেখেন- ‘আমি উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোসা: হেনায়ারা খানমকে কোন নগদ অর্থ প্রদান করিনি এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মামুনুর রহমান হাওলাদারকে কোন চেক প্রদান করিনি’। আবেদনে আরও লেখানো হয়- ‘আমার মূল বিদ্যালয়ে নারীঘটিত কেলেংকারীতে সমস্যায় পড়ায় আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অন্য বিদ্যালয়ে যাওয়ার আবেদন করলে কর্তৃপক্ষ মানবিক কারণে আমাকে ২৯নং বেলুয়া মুঘারঝোর বিদ্যালয়ে ডেপুটেশন করেন’।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে শাহিনুজ্জামানের চাচাতো বোন জানান, ৫ অক্টোবর সকাল ১০টার দিকে টিও ম্যাডাম আমার বাসায় এসে কান্নাকাটি করে সেই টাকা ফেরত দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, শাহিনের বিষয়টি নিয়ে কোন ঝামেলা করতে চাইনি বলে আমি নিজে বারবার এটিও মামুন স্যারকে তখন বলছিলাম আপনি শাহিনুজ্জামানকে স্কুলে যেতে দেন। কিন্তু সে কোনভাবেই তাকে স্কুলে যেতে দেয় নি। মামুন স্যারের মূল উদ্দেশ্য হলো টাকা লাগবে। এরপর একদিন টিও ম্যাডাম আমার বাসায় আসছিলো, তখন আমি নিজে ম্যাডামকে বলেছি শাহিনুজ্জামান গরীব মানুষ, ওর কাছ থেকে আপনারা অল্প কিছু টাকা নেন। এত টাকা নিয়েন না। ওর দুইটা বাচ্চা নিয়ে কিভাবে চলবে? তখন টিও ম্যাডাম আমাকে বলে- আমি এটিও মামুনকে বুঝাইছি মামুন বলছে, ৩০ হাজার টাকা হলে সে এটা সমাধান করে দেবে। তখন টিও ম্যাডাম আমাকে বলে আপনার বাসায় কি টাকা আছে? টাকা থাকলে আমাকে ৩০ হাজার টাকা দেন। আমি (শিক্ষা অফিসার) মামুন সাহেবকে দিয়ে বিষয়টি সমাধান করে ফেলবো। শাহিনুজ্জামান আমার আত্মীয় তাই আমি শাহিনুজ্জামানকে বাঁচানোর জন্য আমার মায়ের কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা এনে টিও ম্যাডামকে দিয়ে বলি এটা নিয়ে আপনারা শাহিনুজ্জামানের বিষয়টি সমাধান করে ফেলেন। পরবর্তীতে মাস শেষ হলে আমি শাহিনুজ্জামানের কাছে সেই ৩০ হাজার টাকা আনতে গেলে সে জানায় এটিও মামুন স্যার তার কাছ থেকে আরও ৬০ হাজার টাকার চেক লিখে নিছে। তখন আমি রাগ হয়ে টিও ম্যাডামকে ফোন দিয়ে বলছি- ম্যাডাম আপনি যে কোনো একটা টাকা শাহিনুজ্জামানকে ফেরত দেন, তা’নাহলে আমি কিন্তু বিষয়টি সবাইকে জানিয়ে দেব। তখন এই বিষয়টি জানাজানি হয়।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক শাহিনুজ্জামান এবং উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার মামুনুর রহমানকে তাদের মুঠোফোনে একাধিক বার ফোন দিয়েও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোসা: হেনায়ারা খানম জানান, আমি কোন টাকা নেইনি এবং ফেরত দেইনি। শিক্ষক শাহিনুজ্জামানকে তাহলে কেন অন্য বিদ্যালয়ে ডেপুটেশনে দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি জানান, শাহিনুজ্জামানের আবেদনের ভিত্তিতে তাকে ডেপুটেশন দেওয়া হয়েছে। তার আবেদনে লেখা আছে সে আমাকে কোন নগদ টাকা দেয় নি এবং এটিও মামুন সাহেবকেও কোন চেক লিখে দেয় নি।